রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মান নিশ্চিত করতে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। চলতি মাসেই অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের সব কিছু গুছিয়ে নিতে কিছু সময় লাগবে। এ ছাড়া অ্যাকর্ডের কাজের দায়িত্ব বুঝে নিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এখনো প্রস্তুত নয়। এসব দিক বিবেচনা করে সরকার অ্যাকর্ডের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়েছে বলে জানান তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি আরো বলেন, এই মেয়াদের জন্য অ্যাকর্ডকে নিয়ে ট্রানজিশন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে সরকার, ব্র্যান্ড, শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, এতে অ্যাকর্ড স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এডওয়ার্ড ডেভিড সাউথহলসহ মোট ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৩ জনই উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ড যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বিজিএমএইর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আরো বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। ক্রেতা জোট দুটি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের নিরাপত্তা মান উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। তারা এই শিল্পের পরম বন্ধু। অ্যাকর্ডের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে রোল মডেল এমন মন্তব্য করে বিজিএমএইর সভাপতি বলেন, ‘আমরা জানতাম না কিভাবে অগ্নিনিরাপত্তা দরজা, স্প্রিংকলার, ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হয়। এসব অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স থেকে শিখেছি। যদিও এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। অনেক উদ্যোক্তাকে এই ব্যয় করার অর্থ না থাকায় কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’
তবে অর্থ ব্যয় হলেও এখন সবুজ কারখানা নির্মাণে লিড সার্টিফায়েড সনদপ্রাপ্ত ১০টি কারখানার সাতটির অবস্থানই বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবুজ কারখানা সনদ পাওয়া মোট ৬৭টি কারখানার মধ্যে ১৬টি প্লাটিনাম কারখানা। আরো ২৮০টি কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকর্ড স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এডওয়ার্ড ডেভিড সাউথহল বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ তদারকির জন্য গঠিত রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন বা সংস্কারকাজ সমন্বয় সেলের (আরসিসি) সক্ষমতা অর্জন করার পর তাদের হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করবে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড। তবে সে জন্য তারা ছয় মাস আরসিসির সক্ষমতা যাচাই করবে।’
বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন থাকতে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সাউথহল বলেন, কারখানা সংস্কারকাজ তদারকি করতে বাংলাদেশ আরসিসি গঠন করেছে। এই সেল কারখানার মান উন্নয়নে যথাযথ কাজ করতে পারছে কি না, তা যাচাই করবে অ্যাকর্ড। এই যাচাইয়ের মেয়াদ হতে পারে ছয় মাস। যদি অ্যাকর্ড দেখতে পায় যে আরসিসি অ্যাকর্ডের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তখন তাদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। জোটটি আরো জানায়, কারখানা সংস্কারকাজের তদারকির দক্ষতা অর্জনসহ কিছু শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রানজিশন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি এসব শর্ত পূরণ করতে না পারলে অ্যাকর্ডের কাজ চলমান থাকবে। সংস্কার ব্যয়ের কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও পণ্যের দাম কেন বাড়ানো হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, কারখানায় কর্মপরিবেশের মান উন্নয়ন করা। সেটি আমরা করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকর্ড জানায়, এক হাজার ৬২০টি কারখানা তারা পর্যবেক্ষণ করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন