রাজধানী ঢাকায় যানজটে দিনে নষ্ট হয় ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। বছরে এই কর্মঘণ্টা নষ্টের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এই যানজট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যানজটে বছরে যে পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হচ্ছে, তা দিয়ে বছরে অন্তত একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। আর এ টাকা দিয়ে বছরে সম্প্রতি উৎক্ষেপিত বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম স্যাটেলাইটের মতো প্রায় ১২টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ‘গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং যানজট নিরসনে পরিকল্পনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে শনিবার এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
ওই বৈঠকের আয়োজন করে দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এসময় গবেষণা প্রতিবেদনটিতে যানজটের কারণে সময় নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতির হিসাব দেয়া হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটে প্রতিবছর ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। যা জাতীয় বাজেটের ১১ ভাগের এক ভাগ।
ঢাকা শহরে গণপরিবহন প্রতিদিন ৩৬ লাখ ট্রিপে ৩৫ শতাংশ যাত্রীকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, যানজটের কারণে মানব চরিত্রের ৯টি দিক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগে প্রভাব পড়ছে বলে জানান আয়োজকরা।
গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, যানজট কমানো গেলে দেশ আরও এগিয়ে যেত। রাজধানীতে যানজটের কারণে যে পরিমাণ সময় নষ্ট হচ্ছে, তার অর্থমূল্য দিয়ে বছরে অন্তত একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হওয়া পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।
ড. মোয়াজ্জেম নগরের যানবাহন পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, এখন ঢাকায় দেড়শ থেকে দুইশ বাস সার্ভিস চলছে। এটাকে প্রতিটি রুটে একটি করে কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। এতে করে সড়কে প্রতিযোগিতা কমবে।
আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো সম্পূর্ণভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শও দেন তিনি।
ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়কে যত দুর্ঘটনা হচ্ছে এর ৭৪ শতাংশ ঘটছে রাস্তা পারাপারের সময়। এ ছাড়া রিকশার অপরিকল্পিত চলাচলও যানজটের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএ, সিসিএস, রাজউক, আরএইডি, এলজিইডি, বিআরটিএর মধ্যে একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
পরিবহন খাতে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, বছরে ১ হাজার কোটি টাকা সাবসিডিয়ারি দিয়ে বছরে যদি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করতে পারি, তবে সেখানে সাবসিডিয়ারি দিলে ক্ষতি কোথায়?
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, রাজধানী থেকে হঠাৎ করেই যানজট নিরসন সম্ভব নয়, তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে হয়তো তা প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিবেদনে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স দিতে আরও বেশি সতর্ক হওয়া, নগরে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা, বাইসাইকেল লেইন ও হাঁটার পথ তৈরি করার পরামর্শ দেয়া হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন