আত্রাইয়ে শ্রমিক সংকটে কদর বেড়েছে ভ্রাম্যমান ধান মাড়াই মেশিনের

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ): নওগাঁর আত্রাইয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ধান মাড়াইয়ের মেশিন। কৃষকদের এখন আর গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। এক সময় বোরো ও আমন ধান কেটে মাঠ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর বড় পিড়িতে পিটিয়ে ধান বের করতে হতো। আবার তেলের ড্রাম বা গাছের গুলও ব্যবহার করা হতো। যেগুলো ছিল সময় সাপেক্ষ। এছাড়া শ্রমিকও লাগতো বেশি। এরপর এলো পা দিয়ে ব্যবহৃত মেশিনে ধান মাড়াই। পরবর্তীতে শ্যালোমেশিনে ধান মাড়াই।
তবে সময়ের পরিক্রমায় দিন যতই যাচ্ছে ততই আমরা যন্ত্র চালিত হয়ে পড়ছি। স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি বেশি সুফল পাবার আশা করছি। আধুনিক যুগে দেশীয় পদ্ধতিতে ধান মাড়াইয়ে যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেটি দিয়ে কম সময়ে যেকোনো পরিবেশে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ এ ধান মাড়াই যন্ত্র হচ্ছে পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন। যা গ্রামগঞ্জে ভূতের মেশিন নামে বেশি পরিচিত। বর্তমানে আত্রাই উপজেলার কৃষকদের কাছে ধান মাড়াইয়ে এ যন্ত্রের ব্যাপক কদর রয়েছে।
বৈরি আবহাওয়ায় ধান কাটা মাড়াইয়ের আগে ঝড়-বৃষ্টিতে উপজেলায় কিছু অংশ ধান পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া ঝড়ের কারণে ধানগাছগুলো মাটিতে শুয়ে পড়ে। ফলে ধান পুরোপুরি পাকার আগ মুর্হূতে এক সঙ্গে কাটা মাড়াই শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকটে পড়ে কৃষক। যেখানে ৪০০-৪৫০ টাকা দিনে মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এক বিঘা জমির ধান কাটতে দূরত্ব ভেদে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
ধান কাটা শ্রমিক সংকটের কারণে আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই পাওয়ার থ্রেসাল মেশিনের ব্যাপক কদর বেড়েছে কৃষকের কাছে। কোনো রকম মাঠ থেকে ধান বাড়িতে বা রাস্তায় নিয়ে এসে এ মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। এ মেশিন দিয়ে প্রতি বিঘা ৪শ টাকা দরে অথবা প্রতি মণ ধান এক কেজি দরে মাড়াই করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। এ মেশিনে ধান মাড়াইয়ে একজন লোক এ কাজ করে থাকেন। তবে পাশ থেকে ধান নিয়ে আসতে আরেকজন সহযোগির প্রয়োজন হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে মাড়াই মেশিনের মালিকদের কাছে ধান কাটার আগেই মোবাইল ফোনে বা স্বশরীরে গিয়ে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে।
তবে মাঠ থেকে ধান তুলে নিয়ে এসে বেশির ভাগ রাস্তায় পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে দেখা গেছে। খড়ের কথা চিন্তাা না করে কোনো রকম এ মেশিন দিয়ে মাড়াই করে ধান বের করতে পারলেই চিন্তামুক্ত। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে কৃষকরা ধান ঘরে তুলার লক্ষে শ্রমিকদের দ্বিগুণ মজুরি দিয়ে ধান কাটা শুরু করলেও শ্রমিক সংকটের কারণে তা পুরোদমে কাটা মাড়াই করতে পারছেন না। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উঠানে কিংবা মাঠে, রাস্তার ধারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন নিয়ে কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করছে। বাজারে নতুন ধান এখন ৮৫০-৯০০ টাকা মণ।
এ ব্যাপারে উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক মো: আজাদ সরদার বলেন, এক সঙ্গে ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়ায় মজুরি বেশি দিয়েও শ্রমিক পাওয়াই দায় হয়ে উঠেছে। কোনো রকম আড়াই বিঘা জমির ধান কেটে অল্প সময়ে পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হয়। মাড়াই মেশিন এলাকায় না আসলে দুর্ভোগে পরতে হতো। তবে এ মেশিনের কদর বেড়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ধান মাড়াইয়ে পাওয়ার থ্রেসাল মেশিনের মালিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রায় আড়াই লাখ টাকায় এ বছর মেশিনটি কিনেছেন। ধান মাড়াই মেশিনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২৫০-৩০০ মণ ধান মাড়াই করেন। এ মৌসুমে মেশিনের দাম উঠে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget