আসন্ন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জাতীয় সংসদে কর্মরতদের জন্য নানান সুবিধা অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বাদ পড়েননি এমপিরাও। তাদের জন্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকের আপ্যায়ন খরচ দ্বিগুণ করা হয়েছে। বাড়ছে সংসদের বার্তাবাহক, দৈনিকভিত্তিক সাংবাৎসরিক কর্মচারীদের খাবার ও অতিরিক্ত খাটুনির ভাতাও।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদ সচিবালয় কমিশনের ২৯তম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এমপি, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজি এমপি বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে যোগদান করেন।
সংসদের বাজেট ৩৩২ কোটি ৫৩ লাখ
বৈঠকে জাতীয় সংসদের জন্য উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে মোট ৩৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার প্রাক্কলিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ২৯৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ৩৪ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দেয়া হয়। এবারের বাজেট চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা বেশি।
বৈঠকে ২০১৯-২০২০, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রক্ষেপণ অনুমোদন করা হয়। বৈঠকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেরও অনুমোদন দেয়া হয়।
সংসদে কর্মরতদের নানা সুবিধা
বৈঠক শেষে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সংসদের বার্তাবাহকদের খাবারের বিল, দৈনিক ভাতা সাড়ে তিনশ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা করা হয়েছে।
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত আবাসিক কমপ্লেক্স ৪৪৮টি ফ্ল্যাটের জন্য একটি মসজিদ আছে। সেই মসজিদের জন্য ইমাম ও মোয়াজ্জিনের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংসদ অধিবেশনকালীন প্রিভিলেজ কর্মকর্তাসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী, দৈনিকভিত্তিক সাংবাৎসরিক কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত খাটুনি ভাতা সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। আর অধিবেশন না থাকলে তাদের খাটুনি ভাতা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা করা হয়েছে। আর সংসদ অধিবেশনকালীন দুপুরের ভাতা বা ইফতার ১৫০ টাকা থেকে ২০০ করা হয়েছে। আর বার্তাবাহকদের যে বেতন বা মজুরি তা ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
সংসদের নকশা নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও সংসদের লাইব্রেরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্পিকার। তিনি বলেন, লাইব্রেরির যে সংস্কার কাজ চলছে তার একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কিছু সাজেশন দিয়েছেন। অন্যান্য দেশের সংসদের প্র্যাকটিসের ওপরে যেসব প্রকাশনা আছে তা সংগ্রহ করার জন্য বলেছেন।
তিনি বলেন, এখন সংসদের লাইব্রেরিতে ৩৫ হাজার বই আছে। আর ডকুমেন্ট আছে ৪০ হাজার। যেসব বইগুলো আছে সেগুলো হার্ডকপি ক্যাটালগ। এগুলো জুলাইয়ের মধ্যে অনলাইনভিত্তিক করতে পারবে লাইব্রেরি।
তিনি বিলেন, এছাড়া কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদোন্নতির ক্ষেত্রে আলাদা পদোন্নতি না দিয়ে সব বিষয় একত্র করে নিয়োগবিধির আলোকে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারি বাসভবনেও গ্যাস লাইন নয়
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জাগো নিউজকে বলেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত আবাসিক কমপ্লেক্সে ৪৪৮টি ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু সেখানে গ্যাসের কোনো সংযোগ নেই। গ্যাসের সংযোগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব উঠলেও প্রধানমন্ত্রী তা নাচক করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বাসাবাড়িতে সরকার আর কোনো গ্যাস দেবে না। এটা ফাইনাল। এখন সরকারি যত ফ্ল্যাট আছে সেখানে এলপিজি স্টোরেজ বানানো হবে। সেখান থেকে লাইন দেয়া হবে। বাসাবাড়িতেও এই পদ্ধতি চালু হবে।
তিনি আরও বলেন, আগে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের নাস্তাবাবদ ৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন ১০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
জানা যায়, বৈঠকে কার্যপত্র উপস্থাপন করেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবদুর রব হাওলাদার। অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন