প্রতিনিধি, নওগাঁ: আইনি সহায়তা চাইতে থানায় গেলে সাধারণ মানুষের কাছে উৎকোচ দাবি করা এবং এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে।
ওসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা গত ২০ মে তাঁর অপসারণের দাবিতে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি)কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওসি আকরাম হোসেন এই থানায় যোগদান করার পর থেকে থানায় আইনি সহায়তা চাইতে আসা সাধারণ মানুদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি দাবি অনুযায়ী উৎকোচের টাকা দিতে না পারায় উপজেলার নাকইল গ্রামের আইজুল হক ও উপজেলার রাজাপুর দরগাপাড়া গ্রামের সোহেল রানা নামের দুই ব্যক্তিকে মারধর করেন ওসি। এসব ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওসির অসহযোগিতার কারণে গ্রাম আদালত কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা নিয়ে তাঁদের কাছ মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাঁদের ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাঁদের ব্যবসা চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। এতে উপজেলায় মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এ অবস্থায় সরকারের ভামমূর্তি অক্ষুন্ন রেখে নিয়ামতপুরবাসীকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষার জন্য ওসি আকরাম হোসেনের অপসারণের দাবি জানান জনপ্রতিনিধিরা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ত্রী অপহরনের ঘটনায় একটি মামলা করতে গত ১৬ এপ্রিল থানায় যান ভাবিচা ইউনিয়নের নাকইল গ্রামের বাসিন্দা আইজুল। এসময় আইজুলের কাছ মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ দাবি করেন ওসি আকরাম হোসেন । টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। অন্যান্য পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতেই ওসি চড়-থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারেন। মামলা গ্রহণের পরিবর্তে নির্যাতন চালিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে আইজুলকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ভাবিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘উৎকোচ না পেয়ে আইজুলকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছেন ওসি। এ ঘটনা জানার পর সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রতিবাদ করেছি। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকেও অবহিত করেছি। ওসির এ ধরণের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ আইনি সহায়তা চাইতে থানায় যেতে এখন ভয় পাচ্ছেন।’
একটি জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে পুলিশের কাছে আইনি সহায়তা চাইতে গেলে সোহেল রানা নামে এক যুবকের কাছে উৎকোচ দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সোহেল রানা নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
শ্রীমন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট-খাটো যে কোন ঘটনায় দু’পক্ষের কাছ থেকে ওসি নিজেই উৎকোচ বা ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন। না দিলেই নিরীহ মানুষকে ডেকে নিয়ে মারপিট করে। নির্যাতন চালায়। পুলিশী হয়রানীর ভয়ে কেউ ওসির বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না। আবার প্রতিকার নিতে সাধারন মানুষ থানায় যাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে ওসির অপসারণ দাবিতে উপর মহলে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আকরাম হোসেন বলেন, ‘বে-আইনীভাবে সুযোগ না দেওয়ায় কিছু ব্যাক্তি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেছেন এবং আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি দোষী না নির্দোষ এটা তদন্তেই বের হয়ে আসবে।’
এ ব্যাপারে নওগাঁর পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ডিআইজি স্যারের নির্দেশে এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কথা। তদন্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন