লেখক :হাসেম আলী, শিক্ষার্থী, গড়েয়া ফাযিল মাদ্রাসা, ঠাকুরগাঁও।
সিয়াম পালনের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নির্দেশ মানা হয়, অন্য দিকে মানব জীবনের সামাজিক ক্ষেএেও এর প্রভাব কম নয়। সিয়াম পালনের মাধ্যমে সমাজে পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে সমাজে অনাবিল শান্তির হাওয়া বয়। ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় গরিব দুঃখী মানুষকে লালন পালনের শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। উদর পূর্তি থাকলে অন্যর ক্ষুধার জ্বালা সম্পর্কে অনুভব করা যায় না। পানির পিপাসা না থাকলে অন্যের পিপাসা অনুভব করা যায় না। এভাবে রোযা পালনের মাধ্যমে একজন সম্পদশালী, দুঃখী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রনা অনুধাবন করে দুঃখী মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও ভ্রাতৃতবোধ জাগ্রত হয়। সেই লক্ষে ইসলামি ভাবধারায় দুঃখীজনকে খাদ্য খাওয়ানো উওম বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিঙ্গাসা করল, ইয়া রাসূলল্লাহ কোন ইসলাম উওম? তিনি বললেন : তুমি অন্যকে খানা খাওয়াবে এবং তোমার পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দিবে। (সুনানু ইবনে মাজাহ :৩২৫৩)।
অন্য বর্ননায় এসেছে রাসূল (সঃ) বলেছেন :সালামের ব্যাপক প্রসার কর, অন্যকে খাদ্য খাওয়াও এবং ভাই ভাই হয়ে যাও, যেমন মহান আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানু ইবনে মাজাহ :৩২৫২)।
মাওসেতুং ছিল চীনের মহান নেতা। চীনের সমাজিক পরিস্হিতি তাকে ভাবিয়ে তুলল। তিনি ভাষন প্রদান কালে বলতেন নিজের খাবারের মধ্য প্রতিবেশী ও সামনে উপস্হিত ব্যক্তিকেও শামিল করে নাও। নিজে ক্ষুধার্ত থেকে অন্যের ক্ষুধার জ্বালা অনুভব কর। এই নির্দেশনা বস্তুুত মাওসেতু এর নয় বরং বহু পূর্বেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম আমাদেরকে এগুলি শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম তার যাবতীয় হুকুমের মধ্য বান্দাহর কল্যানের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। কোন ব্যাপারে মানুষকে অযথা কষ্ট ও সংকীর্নতার সম্মুখীন করা হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় সিয়াম সাধনায় একটু কষ্ট হলেও তাতে রয়েছে বহুবিধ কল্যান ও উপকারিতা।
এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা পবিএ কুরআন এরশাদ করেন, গননার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্য, যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোযা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনের খাদ্যদান করবে। যে ব্যাক্তি খুশির সাথে সৎকর্ম করে তা তার জন্য কল্যানকর করা হয়। আর যদি রোযা রাখ, তবে তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যানকর যদি তোমরা তা বুঝতে পার। (সূরা বাক্বারাহ:১৮৪)।
রোজা পালনের বহুবিদ উপকারিতা ও কল্যাণ সাধিত হয়। এর মধ্যে মানসিক ও দৈহিক উপকারীতাকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করা হয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানসিকতার বিকাশ সাধিত হয়। সিয়াম পালনকারীর চিন্তা চেতনা এবং অনুভূতিককে মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকারোক্তি ও অঙ্গীকার সুদৃঢ় করার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এ ছাড়াও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও স্বীকৃতি দিয়েছে রোজা মনস্তাত্তিক ও মস্তিষ্কের রোগ নির্মূল করে দেয়।
সিগমন্ড নারায়াড একজন বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী। তাঁর থিউরি মনোরোগ বিশেষজ্ঞগনের জন্য পথিকৃৎ। তিনি অভুক্ত থাকা ও রোজা রাখার পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি বলেন রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্কের রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহে আবর্তন বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে।রোযাদার ব্যক্তির দৈহিক খিঁচুনি এবং মানসিক অস্থিরতা এর মুখোমুখি হয় না।
(সুন্নতে রাসুল সাঃ ও আধুনিক বিজ্ঞান) সিয়াম শুধু সামাজিক মানসিক উন্নতি সাধন করে তা নয় বরং রোযা দেহের সুস্থতার ও সহায়ক।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ কারেন,, রোযা রাখ সুস্থ থাকবে। (তিবরানী)।
দেহের আরোগ্য লাভের যতগুলো প্রতিকার ও প্রতিষেধক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ প্রতিকার হল রমজান মাসের রোযা।এ ব্যাপারে গান্ধিজির ক্ষুধার্ত থাকার বিষয়টি খুব প্রসিদ্ধ। জনাব ফিরোজ রাজ গাঁন্ধিজির জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন তিনি ছিলেন রোযা রাখার পক্ষপাতি। তিনি বলতেন মানুষ খেয়ে খেয়ে নিজের শরীরকে অলস বানিয়ে ফেলে। এই অলস না জগতবাসীর আর না মহারাজের। যদি তোমরা শরীরকে সতেজ ও সচল রাখতে চাও তাহলে শরীরকে দাও তাঁর নূন্যতম আহার আর পূর্নদিবস রোজা রাখ। সন্ধ্যাবেলা বকরির দুগ্ধদ্বারা রোযা খোল। (দাস্তানে গাঁন্ধি বিশেষ সংখ্যা) অনেকেই প্রকৃত গবেষণা না চালিয়ে বিশ্বাস করেন যদি তাঁরা এক দিন উপবাস থাকে তাঁরা সহজে রোগাক্রান্ত হয়।অথচ একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ইবনে সিনা তাঁর রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।বৎসরে এক মাস সিয়াম পালনের ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ পতঙ্গের বিশ্রাম ঘটে।এতে করে মানবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। যেমন পূর্নএকমাস রোযার ফলে জিহ্বা ও লালা গ্রন্তিসমূহ বিশ্রাম পায়। তাতে এইগুলি সতেজ হয়ে উঠে। সিয়াম পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। ফলে এগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। মোটা মানুষের স্থূলতা কমিয়ে আনতে সিয়াম সাহায্য করে এবং মাত্রা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনে অনেক রোগ বালাই থেকে হেফাজত করে। এভাবেই সিয়াম মানবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর অনবদ্য অবদান রেখে মানব জীবনকে সমৃদ্ধময় করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন