ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ): ভূমি অফিস মানেই দূর্নীতির আখড়া এবং দালালদের অভয়ারণ্য এমনি ধারনা প্রতিটি মানুষের। এ অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল উঠা-নামা করে না এমনি বক্তব্য সবার। এই নীতিতে বিশ্বাসী নন মহাদেবপুরের এসিল্যান্ড। প্রায় ছয় মাস আগে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা ভূমি অফিস ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম হাবিবুল হাসান। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন উদ্ভাবনী এবং উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম হাতে নেন তিনি। এসব কার্যক্রম চালুর ফলে বদলে গেছে ভূমি অফিসের চিত্র। জনহিতকর এবং উদ্ভাবনী কর্যক্রম চালু করার ফলে সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমেছে, সাধারন মানুষ কোন প্রকার হয়রানি ছড়াই কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর যোগদানের পর থেকেই নান্দনিক ও জনবান্ধব ভূমি অফিস গঠনের লক্ষে তিনি বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করেন। অফিসের সামনে জলাবদ্ধতা দূরীকরনে তিনি সামনের সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। অফিসের সুদৃশ্য গেট দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে দূ’পাশে নানা প্রজাতির দেশী-বিদেশী ফুলের বাগান। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীদের জন্য সুসজ্জিত বসার স্থান খলিয়ান। খলিয়ানে সেবা প্রত্যাশীদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সমারোহে পেপার কর্নার, সুপেয় পানির ফিল্টার ও টেলিভিশন। এসিল্যান্ড এর উদ্ভাবনী চিন্তা প্রচীন ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে চৈত্র সংক্রান্তির পূর্বেই শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষে দেশে প্রথম বারের মত গত ২৬-৩০ চৈত্র পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপি উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একযোগে বিশেষ ভূমি হালখাতার আয়োজন করা হয়। এতে তিনি সাফল্য অর্জন করেন, ২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ১লা বৈশাখের পূর্বেই শতভাগ কর আদায় ও উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে শতকরা ৯৬ভাগ ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে সক্ষম হয়েছে উপজেলা ভূমি প্রশাসন। আর অভিনব এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মডেল হিসাবে নেয়ার দাবি জানিয়েছে মহাদেবপুরের সচেতন মহল। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ভূমি বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মুলক ভূমি প্রশাসন গড়তে এ বিশেষ ভূমি হালখাতার আয়োজন করেন এসিল্যান্ড। এস এম হাবিবুল হাসানের উদ্ভাবনী উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে দেশের বিভিন্ন ভূমি অফিসে ওই হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। কোথায় থেকে এমন ধারনা পেলেন প্রশ্নের উত্তরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম হাবিবুল হাসান প্রতিবেদককে জানান, মানুষ কে কোন বিষয়ে জানাতে হলে প্রয়োজন নতুনত্ব চিন্তা করা। মূলত এখান থেকেই এল “ভূমি হালখাতা”। জনগণকে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এ বিশেষ হালখাতার আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতে এটি যাতে মডেল হিসেবে সারাদেশে পালিত হয় সেজন্য তিনি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলেও জানান। আত্রাই নদীর বালুমহালের ম্যাপিং, জলমহাল, খাস জমি, ভিপি সম্পত্তির ছবিসহ ডাটাবেইজ তৈরী করা হয়। ফলে মহুর্তের মধ্যেই সেবা গ্রহীতাদের জানিয়ে দেয়া সম্ভব হয় এ সকল তথ্য। ভূমি দস্যুদের থেকে খাস জমি রক্ষায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স। মহাদেবপুরের দীর্ঘদিনের সমস্যা মহাদেবপুর-পোরশা প্রধান সড়কের উপর বাজার। তিনি যোগদানের পর-পরই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোহিতায় বাজার স্থানান্তর করে মহাদেবপুরের প্রধান সড়ক যানজট মুক্ত করেন । জন-হয়রানি লাঘবে প্রতি বুধবার খলিয়ানে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। শুনানিতে আসা জৈনক আব্দুস সালাম জানান, জমির নামজারী করতে এসেছেন তিনি, মাত্র ১৫ দিনেই তার নামজারী অনুমোদন হয়েছে কোন ঝামেলা ছাড়াই। ভূমি অফিসের পরিবেশ দালালমুক্ত বলেও জানান তিনি। যে কোন পরামর্শ ও অভিযোগ জানানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ বক্স। আর এ বক্সে অভিযোগ পরার সাথে সাথে ওই নাগরিকের সমস্যার সন্তোষ জনক সেবা প্রদান করে ভূমি অফিস। “অপ খধহফ গড়যধফবাঢ়ঁৎ” নামক ফেসবুক পেজ থেকে নাগরিকদের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেন এসিল্যান্ড হাবিবুল হাসান। কেউ দালাল কিংবা অফিসের কোন কর্মকর্তা, কর্মচারীর হয়রানির স্বীকার হলে ওই ফেসবুক পেজে অভিযোগ জানালে তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম হাবিবুল হাসান জানান, ভূমি অফিস সম্পর্কে সকলের যে নেতিবাচক ধারনা রয়েছে তা পাল্টে দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। আর তাঁর এই প্রচেষ্টায় আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন পারভেজ ও জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন