রাজশাহীতে পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএমএসএফ এর মানববন্ধনে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

মাহবুবুজ্জামান সেতু, মান্দা (নওগাঁ): রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইদুর রহমানকে নির্যাতন করা হয়েছে। গত বুধবার সকালে পুলিশ ভ্যানে তুলে তাকে নির্যাতন করে রাজপাড়া থানার এসআই মাহবুব। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ফুঁসে ওঠে। তাৎক্ষণিক তারা রাজশাহী পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে মাহবুবকে বরখাস্তের আবেদন জানান। পুলিশ কমিশনার তাৎক্ষনিকভাবে মাহবুবকে ক্লোজড করার নির্দেশ দেন। একই সাথে অভিযোগ তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেও বলে প্রতিশ্রæতি দেন পুলিশ কমিশনার। এদিকে বুধবার বিকালে সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট প্রেসক্লারের সামনে এক প্রতিবাদ সভায় এসআই মাহবুবকে বরখাস্তের জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন সাংবাদিকরা। নইলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) এর উদ্দ্যোগে প্রসাদপুর বাজার চৌরাস্তার মোড়ে এ মানববন্ধন পালিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে,বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান তার সূত্রের কাছ থেকে খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য রাজশাহী মহানগরীর কাজীহাটা এলাকার একটি বাসভবনে যান। সে সময় রাজপাড়া থানার এসআই মাহবুব বেশ কয়েকজন পুলিশ নিয়ে বাসভবনটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থল থেকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজপাড়া থানার ওসিকে ফোন দিয়ে জানতে চান, ‘কেনো কাজটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে?’ ওসি তখন জানান যে, পাশের বাসা থেকে অভিযোগ এসেছে। তাই উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করা হবে। ওসির বক্তব্য শুনে সাইদুর রহমান উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘থানায় বসে উভয়পক্ষকে নিয়ে ওসি সাহেব বিষয়টির সমাধান করবেন’। এসময় এসআই মাহবুব সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চান, ‘কাকে ফোন করেছিলেন?’ সাইদুর রহমান জানান, ‘ওসি সাহেবকে’। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাহবুব সাইদুর রহমানের ওপর চড়াও হন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং লাথি মারতে মারতে পুলিশ ভ্যানে করে থানায় নিয়ে যান। মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। সাইদুর রহমান তখন তার পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি জানান যে, ‘তার মাতামহ জননেতা মাদার বখ্শ্। তার বাবা জননেতা আতাউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও বাকশালের রাজশাহীর গভর্নর ছিলেন। তার মা ছিলেন ভাষা সৈনিক’। এসব শোনার পর মাহবুব আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মাদার বখশের পরিবারকে নিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। মাহবুব বলেন যে, ‘সরকারকে পুলিশ টিকিয়ে রেখেছে। চাইলে শেক হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতেও পারে পুলিশ।’ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর বেলি নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং থানা হাজত থেকে সাইদুর রহমানকে বের করে ওসির কক্ষে নিয়ে আসেন। এ ঘটনার পরপরই রাজশাহীর সাংবাদিকবৃন্দ রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের সাথে সাক্ষাত করে এসআই মাহবুবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ সময় সাংবাদিকরা পুলিশ কমিশনারের চেম্বারে মেঝেতে বসে পড়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এসময় মহানগর পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার উপস্থিত ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই দুই নেতাও এসআই মাহবুবের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের অভিযোগ দেন। এসময় পুলিশ কমিশনার তাৎক্ষণিকভাবে দোষী এসআই মাহবুবকে ক্লোজড করার নির্দেশ দেন। তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। এদিকে মান্দা উপজেলা বিএমএসএফ এর উদ্দ্যোগে মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ দোষী এসআই মাহবুবের বরখাস্তের দাবি করেন। এজন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। এ সময় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মান্দা উপজেলা বিএমএসএফ এর সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। উক্ত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় বিএমএসএফ এর আবু কাওসার মাখন, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মো: শামসুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন মান্দা উপজেলা বিএমএসএফ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউন্নবী চঞ্চল, সহ-সভাপতি বুলবুল আহমেদ, সাধারন সম্পাদক আব্দুল মজিদ স¤্রাট, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুজ্জামান সেতু, সহ- সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল মাহমুদ হ্যাপি, দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম তুহিন, প্রচার সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সদস্য রওশন আলম প্রমুখ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget