বর্তমান সময়ে মানুষের পারিবারিক জীবনে যে বিষয়টি মহামারী আকার ধারণ করেছে তা হলো দাম্পত্য জীবনে কলহ-বিবাদ ও পরকীয়ার মতো জঘন্যতম ঘটনা। যা পারিবারিক ও সামাজিক জীবন অহরহ ঘটছে। ফলে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠছে দুর্বিসহ।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যখন ভালো থাকে মনে হয় পৃথিবীটাই তার জন্য জান্নাত। আর যখনই তাদের মাঝে সন্দেহ-অবিশ্বাস, কলহ-বিবাদ শুরু হয় এবং তা পরকীয়ায় রূপ নেয় তখন দুনিয়াটাই হয়ে ওঠে জাহান্নাম। তাই দাম্পত্য জীবনের এ দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রয়েছে কিছু করণীয়।
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের এ খারাপ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকতে রয়েছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য উপদেশ। যা মেনে চলায় রয়েছে মহা কল্যাণ ও মুক্তির পথ। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠবে প্রতিটি মুহূর্ত। দুনিয়াতে প্রতিটি মুহূর্ত বিরাজ করবে শান্তির সুবাতাস।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশগুলো থেকে কয়েকটি-
>> স্বামীর উচিত স্ত্রীকে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হিসেবে গুরুত্ব দেয়া। স্ত্রীর যাবতীয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। যখনই স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেবে, সেখানে শান্তি আসবেই। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সমগ্র দুনিয়াটাই সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হলো পূর্ণবতী স্ত্রী।’ (মুসলিম)
>> ঠিক স্বামীদের বেলায় তাদের উত্তম চরিত্রকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যখনই স্বামীরা পরিপূর্ণ দ্বীনদারী হয়ে ওঠবে; তখন তারা স্ত্রীদের কাছেও দামি হবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সবচাইতে উত্তম, ঈমানের দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তিই পরিপূর্ণ মুমিন। আর তোমাদের মধ্যে সে সব লোক-ই উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)
>> স্বামীর প্রতি আনুগত্যই দিতে পারে স্ত্রীকে সর্বোত্তম মর্যাদা। কথা ও কাজে স্বামীর প্রতিটি কাজের সুপরামর্শ দাতা ও সহায়ক হলে স্ত্রী নিশ্চিত হবে নিশ্চিত জান্নাতী। হাদিসে এসেছে-
হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো স্ত্রী লোক যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যে, স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট, তবে সে স্ত্রী জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)
>> কোনো স্ত্রী যখন তার স্বামীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বা অবাধ্য হয় তখন জান্নাতের ওই ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত হুররা তার জন্য অভিশাপ দিতে থাকে। হাদিসে এসেছে-
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখনই কোনো নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিতে থাকে; তখনই (জান্নাতের) হুরদের মধ্যে তার সম্ভাব্য স্ত্রী বলে, (হে অভাগিনী!) তুমি তাকে (স্বামীকে) কষ্ট দিওনা। আল্লাহ তোমায় ধ্বংস করুক ! তিনি তোমার কাছে একজন মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।’ (তিরমিজি)
>> এ কারণেই অবাধ্য স্ত্রীদের প্রতি ফেরেশতারা অভিশাপ দিতে থাকে। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-
- হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি তার বিছানায় স্ত্রীকে ডাকে; কিন্তু স্ত্রী তাতে সাড়া না দেয়; আর স্বামী তার ওপর অসস্তুষ্ট হয়ে রাত যাপন করে, তবে ভোর পর্যন্ত ফেরেশতারা তার (স্ত্রীর) প্রতি অভিশাপ দিতে থাকে। (বুখারি ও মুসলিম)
- হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, ‘প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর পক্ষে (নফল) রোজা রাখা বৈধ নয়। তার অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে তার ঘরে ঢোকার অনুমতি দেয়াও তার (স্ত্রীর) জন্য বৈধ নয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
নারীরা যদি প্রিয়নবি এ হাদিসটির ওপর আমল করে অন্য পুরুষকে নিজেদের ঘরে প্রবেশ করতে না দেয় বা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের বাক্য বিনিময় না করে তবে পরকীয়া নামক মহামারী কোনো নারীকেই স্পর্শ করার কথা নয়।
পরিশেষে....
নারী জাতি নিজেদেরকে দুনিয়ার যাবতীয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত রাখতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ছোট্ট হাদিসটিরে ওপর আমল করা জরুরি। প্রিয়নবি বলেছেন, ‘আমার অনুপস্থিতে আমি পুরুষদের জন্য মেয়েদের চাইতে বেশী ক্ষতিকর ফিতনা (বিপর্যয়) আর রেখে যাইনি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং দুনিয়ার যাবতীয় ফিতনায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি নিজেদের হেফাজতে আল্লাহর বিধি-বিধান যথাযথ পালন এবং উল্লেখিত হাদিসগুলোর আমল করার জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে দাম্পত্য জীবনের যাবতীয় ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে হেফাজত করুন। পরকীয়ার মতো মহামারী থেকে নারী-পুরুষ সবাইকে হেফাজত করুন। প্রিয়নবির হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন