বরেন্দ্র রেডিও’র অনুষ্ঠান শুনে বাল্য বিয়ে বন্ধ করলো ইরা নিজেই


{সফলতার গল্প-পর্ব ১}


আবু রায়হান রাসেল, নওগাঁ: ইসমত জাহান ইরা ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হবেন। সবাইকে পাঠদানের মাধ্যমে জাতিকে শিক্ষত করে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব নেয়ার অংশীদার হবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই যে তার মনের ভেতরে লালিত স্বপ্ন অন্ধকারে মলিন হবে তা কখনো কল্পনা করতে পারেনি ইরা। খেটে খাওয়া দিন মজুর ,অক্ষরজ্ঞানহীন, অস্বচ্ছল, দরিদ্র পিতার ভুল সিদ্ধান্তে ভাঙ্গতে বসেছে স্পপ্নগুলো।

নওগাঁর রাণীগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন ইরা। কিন্তু পিএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার পরও তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার দরিদ্র পিতা আসলাম হোসেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ইরার মনের ভেতরের স্বপ্নকে পূর্নতার রুপ দিতে বদ্ধপরিকর। প্রথমে তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে বোঝানের চেষ্ঠা করে কিন্তু ফলাফল শূন্য। তার মানে কি ইরার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে ঠিক এমনই সময় মনে পড়ে গেল তার প্রিয় কমিউনিটি রেডিও, বরেন্দ্র রেডিও’তে প্রচারিত বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক অনুষ্টান সচেতনাই মুক্তি, সোনালী স্বপ্ন সহ বেশ কয়েকটি সচেতনতামূলক প্রচারিত প্রোমোর কথা।

অনুষ্টানে ইরা শুনেছেন যে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে কি করা উচিত এবং এবিষয়ে কার সাহায্যে নেয়া প্রয়োজন এবং শুনেছেন কি ভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হয়।
ইরা যোগাযোগ করেন ¯’ানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আযমের এর সাথে সবকিছু শুনে চেয়ারম্যান প্রথমে ইরার এর বাবাকে বোঝানোর চেষ্ঠা করেন যে, বাল্যবিয়ে কি করে একটি মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।

কিন্তু ইরার বাবা নানা ধরনের অজুহাত তুলে ধরতে থাকেন, বলেন অভাবের সংসারে ৪ মেয়েকে নিয়ে টানাপোরণ লেগেই থাকে এছাড়া নানা সমস্যার কথা বলতে থাকেন ইরার বাবা।এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের ধমকে ভয়ে মেয়েকে বিয়ে দেবেনা বলে কথা দেয় বাবা আসলাম হেসেন। কিন্তু এর কিছু দিন পর রাতের অন্ধকারে ইরার অমতে পাশের গ্রামে বিয়ে ঠিক হয়।দিশেহারা হয়ে পরে ইরা এমন সময় বাবার মোবাইল থেকে গোপনে ফোন করেন স্থানীয় চেয়ারম্যানকে এর পর চেয়ারম্যান এসে সঙ্গে সঙ্গে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দেয়। মুসলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় বরপক্ষকে। তার পর ইরার বাবা সকলের কাছে কথা দেন যে তার মেয়েকে আর বিয়ে দিবেননা। বাল্যবিয়ে বন্ধে ইরার সঠিক পদক্ষেপের পাশাপাশি বিশেষ অবদান রয়েছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ।

পরিসংখ্যান ও বাস্তবতার দিক থেকে সফলতা দেখালেও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে শিশু বয়সী মেয়েদের বিবাহের মাত্রা সামাজিক অস্থিরতা, নিরাপত্তার অভাব, বেকারত্ব, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা, পারিবারিক ভাঙন ও অবক্ষয়ের কারনে। যে সব সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা স্কুলগামী হয়েছ তারা ঝরে পড়েছে এবং তাদেরকে ঠেলে দেয়া হয়েছ একটা অনিশ্চত জীবনের দিকে। পরিবারের অবিভাবকদে হতে হবে সচেতন পাশাপাশি একটি স্কুলে যদি শিশুবান্ধব পড়ার পরিবেশ থাকে তাহলে সেই শিশুটি কিছুতেই তার স্কুল পরিত্যাগ কিংবা অনীহা থাকার কথা নয়। আমাদেরকে সেই কার্যকারণ খুঁজে বের করতে হবে। দেখতে হবে শিশুবান্ধব স্কুলের জন্য যে যে অপরিহার্য শর্ত রয়েছে তা আছে কিনা।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হয়েছ মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে মাত্র একহাজার টাকার দেনমোহরে বিয়ে হয়েছ সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের যাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।

প্রবল ইচ্ছা শক্তিই মানুষের সফলতার দ্বার খুলে দিতে পারেন তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থী ইসমত জাহান ইরা। আমাদের একটু সঠিক পদক্ষেপ রুখে দিতে পারে বাল্য বিয়ের মত অভিশাপ। তাই প্রয়োজন সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টার।
লেবেলসমূহ:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget